যাইতাছস্?- আমি চমকে উঠি। ‘নতুনবৌ’ বিশেষণবিহীন নিজেকে নিজের কাছেই কেমন অজানা, অচেনা নতুন মনে হয় আমার। জোৎস্না পিসির চোখের দিকে তাকাই। হাসি খুশী মানুষটাকে খুব উদাস, বিপন্ন, দূর শুন্যতায় বিক্ষিপ্ত- ভাসমান মনে হয়। ধূসর চোখের পাতায় জমে থাকা টলটলায়মান জলের ফোঁটা কী কোন কষ্টের নাকি বয়সের ভারে বিপর্যস্ত চোখের অনিয়ন্ত্রিত বেয়াড়া আচরণ- আমি বুঝে উঠতে পারি না!
পচিঁশ বছর আগে একটা চাদর ঘেরা রিক্সায় চড়ে আমি প্রথম যেদিন এই পথ ধরে এসেছিলাম সেদিন ঠিক এই জায়গাটায়ই দাঁড়িয়ে পিসি হৈ হৈ করছিল। আমার আজও স্পষ্ট মনে পড়ে। ওমা গো, সেকি চেঁচামেচি! কী ভয়টাই না পেয়েছিলাম সেদিন! ঘোমটা সড়িয়ে চাদঁরের ফাঁক দিয়ে একটু মুখ বাড়াতেই চোখে পড়ল এই জোৎস্না পিসি রিক্সার সামনে দাঁড়িয়েছেন- রাশেদ, খাড় কইতাছি! তরে আগেঐ কইছিলাম না? তর মার আগে আমি তর বউ দেখমু!
আমরা দুজন রিকশা থেকে নেমে পিসির পা ছুঁয়ে আর্শীবাদ নিয়েছিলাম। পিসি আমার মুখটা তাঁর দুহাতের শীর্ণ আঙ্গুলে বন্দী করে বলেছিলেন- বাহ্ নতুনবৌ ত দেহি এক্কেবারে চান্দের লাহাইন সুন্দর! রাশেদরে তুই খুব সুখি হবিরে বাপ!
আঁচলের গিট খুলে আমার হাতে দশ টাকার একটা নোট দিয়েছিলেন। সেই নোট আমি অনেকদিন যত্ন করে একটা কাঁচের গ্লাসের ভিতর রেখে দিয়েছিলাম। নোটটার সাথে মায়ের ভালবাসার মত কিছু যেন জড়িয়ে ছিল তাই ওটা আর দশটা নোটের চেয়ে আমার কাছে অন্য রকম ছিল।
একদিন আমার ছোট ছোট তিন ননদের বায়না মিটাতে ফেরিওয়ালার হাতে সেই দশ টাকার নোটটা তুলে দিয়েছিলাম। জীবনে প্রথম দায়িত্ববোধের কাছে প্রিয় বিসর্জন দেয়ার ছবক শিখেছিলাম। ষোল সতের বছর বয়সে নিজের পা আলতা শূন্য রেখে অন্যকে লাল ফিতা কিনে দেয়ার কাজটা খুব সহজ না। যদিও এরপর মনোকষ্টের বেড়াজাল মুক্ত হয়ে আরও কত যে ছোট বড় শক্ত ত্যাগের পরীক্ষায় উতড়ে গিয়েছি তার হিসেব নেই।
বিয়ের সপ্তাহ খানেকের মাথায় শ্বশুরের মস্ত বিরান ভিটায় আমার হাতে নানা জাতের সবজি বীজেরা নতুন কুঁড়ি মেলেছিল। জোৎস্না পিসি একদিন সকালে ভিজা গোবর মাটির ফাঁকে সবে মাত্র দুপাতা নিয়ে উঁকি দেয়া লাউয়ের চারা নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমার শ্বাশুড়ীকে গদ্গদ্ কন্ঠে বলছিলেন- রাশেদের মা লো, নতুনবৌ তর গরে লক্ষ্মীর বর লইয়া আইছে লো। বদলাইব, দেহিস্ তর সংসারের দুঃখ কষ্ট বদলাইয়া দেহিস নতুন কইরা অনেক অনেক সুখ আইব লো!
জোৎস্না পিসিদের এমন সব কথা আমাকে খুব মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত করত। আমি একবারে দমকা হাওয়া হয়ে বাতাসের মত বয়ে বেড়াতাম। আর বদলানোর নেশায় মেতে উঠতাম। আমার মনে আছে বিয়ের পরের দিন শেওলা ধরা কাঁসার বদনাটাকে ঘষে মেজে আমার শ্বশুরকে ওজুর পানি দিলাম উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- বৌমা, এই নতুন বদনা পাইছ কই?
অসুন্দর কিছু আমার কাছে কোন সময়ই ভাল লাগেনি। এটা ওটা বদলাতে বদলাতে তেল চিটচিটে বালিশের কভারগুলোও বদলে ফেলেছিলাম। রঙিন সুঁতায় গোলাপফুল তোলা বালিশে ঘুমিয়ে আমার স্কুল পড়ুয়া দেবর সকাল বেলা বলেছিল- সত্যি ভাবী, পরিষ্কার জিনিস ব্যবহারে এত মজা আগে জানা ছিল না!
কাজে ডুবে থেকে মাঝে মধ্যেই আমার নাওয়া খাওয়ার কোন ঠিক ঠিকানা থাকত না। কোন কোন দিন গোসল করতে আমার রাত হয়ে যেত। একদিন সন্ধ্যার বেশ পরে গোসল করতে বিলে গেলাম। বাড়ীর কাছেই চিলাইনদীকে আকড়ে থাকা টেংরিমাথির বিল। আষাঢ় মাস, বিলে তখন কাঁচের মত স্বচ্ছ- এক বুক পানি। আমরা দুজন গেলাম।
আমি পানিতে নেমে বেশ বেশ কিছু দূর এগিয়েছি। হঠাৎ ও বলল- এই, সাপ সাপ!
-ও মাগো! বলেই প্রায় আর্তচিৎকার করে একরকম উড়ে গিয়ে আমি ওর বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম।
-দূর বোকা! আমিতো মিছেমিছি মজা করেছি মাত্র।
সাপকে আমি সীমাহীন ভয় পাই। রাশ ভারী মানুষটার মজা করার কথায়ও আর আমার ভয় ভাঙল না। অবশেষে আমি ওর হাত ধরে প্রায় ওর বুকের সাথে লেপটে থেকেই পানিতে নামলাম। জানি না মানুষটারও সেদিন কী হয়েছিল- সে আমাকে গলায় জড়িয়ে রেখে বিলের মাঝামাঝি বহুদুর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। ভয় আর আনন্দের মধ্যে সেদিন এক অসম্ভব রকম সুখী আমিকে আবিষ্কার করেছিলাম!
রাঁশি রাঁশি পানির ছোট ছোট ঢেউয়ের উপর আকাশ চাঁদের আলোর বন্যা ঢেলে দিয়ে অদ্ভূত মোহনীয় অন্যরকম সুন্দর এক পৃথিবী সাজিয়েছিল। কানের কাছে ঢেউগুলি অনবরত খলবলিয়ে কি জানি বলছিল। টেংরিমাথির প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল আলো আধারীতে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামগুলি যেন ভাসছে!
অনেক রাত হল, চল এবার বাড়ী ফেরা যাক।- ও আমার ঠোঁটে ওর অদ্ভুত রকমের ঠাণ্ডা ঠোট ছুঁইয়ে কতক্ষণ পর মৌনতা ভেঙ্গেছিল আমার মনে নেই। তবে আমি তখনও ফিরতে চাইনি। আরও শক্ত করে ওর গলা জড়িয়ে সেই অনাবিল সুখের ঘোরে থাকতে চেয়েছিলাম। আরও অনেক সময় হয়ত কাল থেকে কাল পেরিয়ে- অনন্তকাল।
ঐদিন রাতেই আমার প্রচন্ড জ্বর উঠল। সকালে ও পাগল প্রায় হয়ে পাশের গ্রাম থেকে ডাক্তার নিয়ে এল। বুড়ো ডাক্তার আমাকে খুব মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করলেন যাওয়ার আগে হেসে ওকে বললেন- মাষ্টার, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। দুএকদিন গেলে এই জ্বর এমনিতে ছেড়ে যাবে। তবে একটা খুশির খবর আছে। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাও! তুমি বাবা হতে চলেছ।
ঠিক, আমি নিজেও এরকম একটা কিছু আঁচ করেছিলাম। সম্ভবত মাস তিন চারের একটা হিসেবের গোলমাল চলছিল আমার। আমি এ নিয়ে কোন চিন্তা দুশ্চিন্তা কিছুই করিনি। আসলে তেমন করে ভেবে দেখার বয়সও আমার তখন হয়নি।
দিন কয়েক পরের ঘটনা। আমি ছুটোছুটি করে সকালের কাজ সাড়ছি। এর মাঝেই আমার শ্বাশুড়ির ডাকে তার কাছে ছুটে গেলাম। তাঁর হাতে ছোট্ট কাঁচের গ্লাসে পীত বর্ণের কিছু তরল। আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে নির্বিকার গলায় বললেন- বউ ওষূধটুকু খাইয়া লও।
আমার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিলাম। এরকম ছোট ছোট গ্লাসে করে আমার মাও আমাকে মাঝে মাঝে চিরতার রস, নিম পাতার রস খাইয়ে দিত। তখন খেতে চাইতাম না। পালিয়ে যেতাম কিংবা কখনো সখনো ঠেলে ফেলে দিতাম। নিজের মাঝে যে পরিবর্তনটা এসেছে তার জন্য জরুরী কিছু বিবেচনা করে আমি ওষুধটুকু গলায় ঢেলে দিলাম। কামারের দোকানের লাল টকটকে লোহা পানিতে ডুবিয়ে দিলে যেমন হয় ওষুধটুকু তেমনিভাবে যেন আমার উদর পর্যন্ত নেমে গেল। আমি চোখে মুখে অন্ধকার দেখে কোন মত টলতে টলতে উচ্চারণ করলাম- মা গো!
আমার শ্বাশুড়ি অনেকটাই বিরক্তির সুরে বলল- কিছু অইব না। একটু পরেই সব ঠিক অইয়া যাইব। অহনেই অইসব ঝুট ঝামেলার দরকার নাই।
আমি আমার সর্বনাশটুকু বুঝতে পারলাম। যখন বুঝতে পারলাম তখন আর আমার কিছু করার বাকী থাকল না। আমি ঘরে বসে বসে অনেক কাঁদলাম। বিকেলের দিকে আমার শ্বাশুড়ি ঘরে ঢুকে ঝাঁঝালো গলায় বললেন- ছি: তুমি না নতুন বৌ! এই সব লইয়া ঢং করতে তোমার শরম লাগে না? দশ গেরামে জানলে খুব সম্মান বাড়ব! যাও, সব কাম কাইজ পইড়া রইছে শেষ কর গিয়া।
কষ্টের বোঝা বুকে নিয়ে বাকী বেলা কাজ করলাম। রাতে শোওয়ার পর পৃথিবীতে সব চেয়ে আপন বলে যাকে জানতাম তাকে আমার উপর করা অন্যায় জুলুমের কথাটা বলতে চাইলাম। আমার কষ্টগুলি সবকিছুকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে কান্নার তুফান তুলে বের হয়ে আসছিল। আমি কোন মতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। পাশের ঘরে শ্বশুর শ্বাশুড়ী শুনতে পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আমার কথাগুলি সে শুনল না।
তিন চার দিন পর বসে বসে কী একটা কাজ করছিলাম। উঠে দাঁড়াতেই আমার শরীর থেকে কিছু একটা খসে পড়ল। আমি ঠিক মত দেখে উঠার, বুঝে উঠার আগেই আমার শ্বাশুড়ি ছোঁ মেরে তা তুলে নিয়ে আঁচলের আড়াল লুকিয়ে ফেলে দ্রুত পায়ে বাড়ীর কাছের একটা ঝোঁপের দিকে ছুটে গেলেন।
আমার মনটা হু হু করে উঠল। কী জানি হারালাম। দেখা হল না। এর পর চুপি চুপি ঐ ঝোপটার ধারে কত শত বার গিয়ে দাঁড়িয়েছি। নিজের হারানো অদেখা নতুনকে একটু দেখার নি:স্ফলা চেষ্টায় চাতকীর মত এদিক ওদিক খুঁজে বেড়িয়েছি ।
এক সময় বুঝতে পেরেছি আমার শ্বশুরের সংসারে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থাকাতেই আমার সন্তান আসাটাকে আমার শাশুড়ি মেনে নিলেন না।
দেবর ননদেরা আমার আদর ভালবাসায়ই বড় হয়ে উঠল। ননদদের একে একে বিয়ে হয়ে গেল। আমার শ্বাশুড়ী আবার আমাকে এ ওষুধ ও ওষুধ খাওয়ান। পাঁচটা কথা বলেন আমি মুখ বুজে সব সহ্য করি।
অবশেষে আমার শ্বাশুড়ির পীড়াপীড়িতে ও আমাকে শহরে বড় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা হয়। ডাক্তার সব কিছু দেখেন, জানেন- নিরাশ গলায় জানান আর কিছু হবার নয়। এ শ্বশানে আর কোন ফুল ফোঁটার নয়।
আমার নিজের মনে যে ভয়, যে সন্দেহটা ছিল তাই সত্যি হল। হাসপাতালের বাইরে বের হয়েই ও আমাকে মা তুলে গালি দিয়ে বলল- দিলি তো আমাকে নির্বংশ করে!
আমি দুপা পিছনে সড়ে গেলাম। ওর মাঝে আমি নতুন আরেক জনকে আবিষ্কার করলাম। আমার খুব ঘৃণা হল। এত বড় একটা গালি হজম করে ফেললাম। নিজে নারী বলেই হয়ত ওকে আরেকজন নারীর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারলাম না যার জন্যে হয়ত গালিটা কিঞ্চিত হলেও যথার্থ ছিল । আমার রুচিবোধও আমাকে তা করা থেকে বিরত রাখল। সড়ে গেলাম- আর কোন দিন তেমন করে মানুষটার কাছে আসতে পারলাম না। কোথায় জানি একটা দুরত্ব রয়েই গেল।
আমার দেবরের লেখা পড়া তখনও শেষ হয়নি শহরে হোস্টেলে থেকে কলেজে লেখা পড়া করে। বংশ রক্ষার নামে তাকে একদিন খবর দিয়ে বাড়ি এনে আমার শ্বশুর শাশুড়ি এক রকম জোর জবরদস্তি করে বিয়ে দিয়ে দিলেন । বছর দেড়েকের মাথায় বংশের প্রদীপ জ্বলে উঠল। বাড়ী আলোকিত করে আমার দেবরবৌয়ের কোল জুড়ে এল- পল্টু!
সবাই খুব খুশী, আমার মাতৃত্ববোধ আমাকেও খুব খুশী করে তুলল । দিনে দিনে পল্টু যেন আমারই সন্তান হয়ে উঠল। আমার দেবরবৌ আমাকে বড় বোনের মতই আপন করে দেখত সেই সুবাদেই পল্টুকে নিজের করে পেতে আমার কোন অসুবিধা হল না।
পল্টুকে ঘিরে আমার আর আমাকে ঘিরে পল্টুর পৃথিবী যেন আবর্তিত হতে লাগল। সেই পৃথিবীতে আমার না পাওয়ার কোন ক্লেশ বা দুঃখবোধ ছিল না। আমার অন্তর নিহিত স্নেহ ভালবাসার সবটুকু আমি পল্টুকে নিংড়ে দিয়েছি, এক বিন্দুও বঞ্চিত করিনি।
একদিন বাড়িতে মেহমান হয়ে ওর স্কুলের এক শিক্ষিকা এলো। আপ্যায়নের জন্যে আমি ছুটোছুটি করে এটা ওটা করছি। একসময় ওদের জন্য নাস্তা নিয়ে বসার ঘরে ঢুকেই দেখলাম সেই শিক্ষিকা মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো আঁধার, ন্যায় অন্যায় সব বুঝার ক্ষমতাই স্রষ্টা আমাকে দিয়েছেন। সেই মুগ্ধতায় অন্য কিছু দেখতে পেলাম আমি।
আচ্ছা, তোমাদের স্কুলের ওই মাষ্টারনির সাথে তোমার কি কোন সম্পর্ক আছে?- রাতে আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম। ও আমার দিকে এক পলকের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারল না। আমি প্রাণপণে একটা দীর্ঘশ্বাসকে আমার বুকে কবর দিয়ে দিলাম। আমার হৃদয় পটে মানুষটার আরও নতুন একটা পরিচিতি আঁকা হয়ে গেল।
এরপর দুটি জিনিস ঘটতে থাকল। মাষ্টারনি আর ওকে ঘিরে নানা কথা আমার কানে আসতে শুরু করল আর বাড়িতে ওর বংশ রক্ষার নামে সেই সম্পর্কটাকে জায়েজ করার একটা প্রক্রিয়া চলতে থাকল। আপনজন পর হয়ে গেলে সেই দুঃখ প্রকাশের শক্তিও হয়ত মানুষ হারিয়ে ফেলে। আমিও যেন বাক শক্তি হারিয়ে ফেললাম। শুধু আমার দেবরবৌ এই প্রক্রিয়াটাকে রুখে দেয়ার জন্যে সরব হয়ে উঠল।
একদিন শোনলাম ওরা দুজন খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছে। আমার দেবরবৌ আমাকে নানা শলা পরামর্শ এমনকি মামলা করে দেয়ার জন্য তাগাদা দিতে লাগল। দেবর বৌকে বললাম- আইন আদালত করে সম্পত্তির উপর অধিকার আদায় করা যায় কিন্তু মনের উপর পারা যায় না।
সে আমার মুখের উপর খানিকটা তাকিয়ে কি যেন দেখল, ভাবল। তারপর ছোঁ মেরে পল্টুকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেল। পল্টুকে দেবরবৌ সারাদিন আর আমার কাছে আসতে দিল না। সে সব সময় আমার সাথেই খায়, দায়, ঘুমায়। সেই অভ্যাসের জের ধরেই রাতে আমার সাথে ঘুমানোর জন্য পল্টু গগন বিদারী কান্না জুড়ে দিল।
আমার দেবরবৌকে লক্ষ্য করে এক পর্যায়ে শাশুড়ি চিৎকার করতে লাগলেন- মাগীর ঝি আল্লাদ শেষ অইয়া গেছে লো! বুঝি, বুঝি সবই বুঝি লো- পোলার একলা রাজ করার স্বপ্ন ভাইঙ্গা যাওনে অহনে কুত্তা পাগল অইয়া গেছস না!
কথাটার ধাক্কায় আমার বুকের পাঁজর গুলি গুঁড়িয়ে গেল। এতদিন শুধু সম্পত্তির লোভে দেবরবৌ আমার সাথে ছলনা করে বোনের মত অভিনয় করেছে। এ নতুন সত্য আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
তবু আমি সারা রাত দরজা খুলে বসে থাকলাম, পল্টুকে আর পেলাম না। একবার আমার জঠর অঙ্গার হয়েছে তবু পল্টুকে পেয়ে তা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু পল্টুকে হারিয়ে আমার কোল খালি হল। এ কষ্ট সহ্য করতে পারলাম না- কোন মাই পারে না, পারাটা দুঃসাধ্য!
আমি যেতে যেতে তাকিয়ে দেখি- চিলাই যেন প্রায় বুজে এসেছে। পানি তার স্বচ্ছতা হারিয়েছে। মানুষের বর্জ্য, অনাচার, পাপ বয়ে বয়ে সেও যেন শ্রান্ত, ক্লান্ত, বিপর্যস্ত- সংক্রমিত। ইচ্ছে করলেই তাতে বালিহাঁসের মত ডুব সাঁতার কাটা যাবে না।
কেন জানি অনুচিত কান্নায় আমার গলা বুঁজে আসে, চোখ ভরে উঠে। মনুষ্যত্ব নাকী নারীত্বের কারণে আমার এমন হয় আমি বুঝে উঠতে পারি না। পঁচিশ বছরের ছোট ছোট মায়াগুলি মিলেমিশে এক নতুন মহামায়া হয়ে আমার আমিকে জাগিয়ে তোলে। কত কথা বলে, কত ঘটনা, অনুঘটনা মনে করিয়ে দেয়। তবু আমি সামনে পা ফেলি। আমাকে যেতেই হবে। সবার নতুন নতুন স্বপ্নের মাঝে নিজেকে বড় অচল, পুরানো আর বেমানান মনে হয় আমার।
টেংরীমাথির বড় বড় ক্ষেতগুলিকে বিভাজিত করা আইলগুলি দেখতে দেখতে আমি এগিয়ে যাই। বিশালত্বকে গ্রাস করা এই নতুনত্ব আমার একদম ভাল লাগে না।
২২ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩২ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৭৮
বিচারক স্কোরঃ ৪.১৩ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ১.৬৫ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪